একটি নেটওয়ার্কে নেটওয়ার্কের ফিজিক্যাল ডিভাইস ও কম্পোনেন্ট গুলো যে পদ্ধতিতে একে অপরের সাথে জুড়ে দিতে হয় সেই পদ্ধতিকে বলা হয় নেটওয়ার্ক টপোলজি।ব্যাপারটা বুঝে আসলো না।
তাহলে আরেকটু সহজভাবে বলি, যেই পদ্ধতিতে কম্পিউটার,রাউটার,ক্যাবল ও নেটওয়ার্কের অন্যান্য ডিভাইসগুলো যেভাবে নেটওয়ার্কে পরস্পর সংযুক্ত থাকে সেই পদ্ধতিকে নেটওয়ার্ক টপোলজি বলে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর জন্য মূলত ছয় ধরনের টপোলজি ব্যাবহার করা হয়।যথাঃ
- বাস টপোলজি (Bus Topology)
- রিং টপোলজি (Ring Topology)
- স্টার টপোলজি (Star Topology)
- ট্রি টপোলজি (Tree Topology)
- হাইব্রিড টপোলজি (Hybird Topology)
- মেশ টপোলজি (Mesh Topology)
বাস টপোলজি (Bus Topology)
এই টপোলজিতে সবগুলো ডিভাইস একটি মূল তারের সাথে সংযুক্ত থাকে।এই মূল তার বা এই টপোলজির প্রধান ক্যাবলটিকে মূল বাস/ব্যাকবোন (Backbone) বলা হয়।বাস টপোলজিতে কোনো একটি কম্পিউটার যদি কোনো তথ্য প্রেরণ করে তখন এটি সকল কম্পিউটারের কাছেই পৌঁছে যায়। কিন্তু যেই কম্পিউটারের সেই তথ্যটি পাওয়ার কথা শুধুমাত্র সেই কম্পিউটারটিই এই তথ্য গ্রহণ করে আর বাকি কম্পিউটারগুলো একে উপেক্ষা করে।এই টপোলজি ছোট আকারের নেটওয়ার্ক তৈরিতে খুবই সহজ। উল্লেখ্য যে মূল বাস/ব্যাকবোন (Backbone) নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক নষ্ট হয়ে যায়।তবে এই টপোলজিতে কোনো কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক নষ্ট হয়ে যায় না।
রিং টপোলজি (Ring Topology)
রিং টপোলজিতে প্রত্যেকটি কম্পিউটার অন্য দুটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত। রিং টপোলজি গোলাকার বৃত্তের মতো মনে হলেও আসলে কম্পিউটারগুলো বৃত্তাকারে থাকে না।তবে কম্পিউটারগুলোর মাঝে বৃত্তাকার যোগাযোগ থাকে।ফলে এই টপোলজিকে রিং টপোলজি (Ring Topology) নামে নামকরণ করা হয়।এই টপোলজিতে কোন প্রধান বা কেন্দ্রীয় কম্পিউটার থাকে না।যার ফলে প্রত্যোকটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান।এই টপোলজিতে নেটওয়ার্কের কোনো কম্পিউটার তথ্য পুনঃপ্রেরণের ক্ষমতা হারালে অথবা কম্পিউটারটি নষ্ট হয়ে গেলে পুরো নেটওয়ার্কটি অকেজো হয়ে যায়। তখন নষ্ট কম্পিউটারটি অপসারণ করে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে হয়।
স্টার টপোলজি (Star Topology)
স্টার টপোলজির সকল হোস্ট / নোড (একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসকে নোড বলা হয়) একটি কেন্দ্রীয় হাব (Hub)/সুইচ (Switch)-এর সাথে সংযুক্ত থাকে।স্টার টপোলজিতে কম্পিউটারগুলো কে স্টারের মতোই সাজাতে হবে তা কিন্তু নয়।এই টপোলজিতে কোনো একটি কম্পিউটার ডেটা/তথ্য প্রেরণ করতে চাইলে তা প্রথমে হাব (Hub)/সুইচ (Switch)-এ পাঠিয়ে দেয়। এরপর হাব (Hub)/সুইচ (Switch) সেই সিগন্যাল প্রাপক কম্পিউটারকে পাঠিয়ে দেয়।কেউ যদি তাড়াতাড়ি খুব সহজেই একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায় তাহলে তার জন্য স্টার টপোলজি (Star Topology) উপযোগী।
ট্রি টপোলজি (Tree Topology)
অনেকগুলো স্টার টপোলজির সম্প্রসারিত রূপ হলো ট্রি টপোলজি। গাছের যেমন অনেক শাখা প্রশাখা থাকে ঠিক তেমনি এই টপোলজির কম্পিউটারগুলো শাখা প্রশাখার মতো বিন্যস্ত থাকে।ট্রি টপোলজি মূলত বাস টপোলজি এবং স্টার টপোলজির বৈশিষ্ট্যগুলোকে একত্রিত করে।শাখা-প্রশাখা সৃষ্টির মাধ্যমে ট্রি টপোলজির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা যায়। ট্রি টপোলজি হায়ারার্কিকাল টপোলজি নামেও পরিচিত।
হাইব্রিড টপোলজি (Hybird Topology)
হাইব্রিড টপোলজি বাস, রিং,স্টার ইত্যাদি টপোলজির সমন্বয়ে গঠিত হয়। ইন্টারনেট হলো এই টপোলজির অন্যতম উদাহরণ কেননা ইন্টারনেট এমন একটি নেটওয়ার্ক, যেখানে প্রায় সব ধরণের নেটওয়ার্কই সংযুক্ত আছে।এই টপোলজিতে প্রয়োজন অনুযায়ী নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে।
এই টপোলজির অন্যতম সুবিধা হলো এই নেটওয়ার্কের কোনো একটি অংশ নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অচল হয় না বরং উক্ত অংশবিশেষ নষ্ট হয়ে যায়।
মেশ টপোলজি (Mesh Topology)
মেশ টপোলজিতে নেটওয়ার্কে যুক্ত প্রত্যেকটি হোস্ট একে অপরের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে।এই টপোলজিতে কম্পিউটারগুলো একাধিক পথে যুক্ত হতে পারে।একটি কমপ্লিট মেশ টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার সরাসরি নেটওয়ার্কভুক্ত অন্যান্য সকল কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে।রিং টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটারকে প্রতিটির সাথে অতিরিক্ত নোড দিয়ে যুক্ত করলেই তা মেশ টপোলজিতে পরিণত হবে।